🌧️ বৃষ্টির দিনে দেখা

সকাল থেকেই আকাশে মেঘ জমেছিল। কলেজ শেষে সবাই দ্রুত বাড়ি ফিরছিল, কারণ যে কোনো মুহূর্তে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামতে পারে। রুমানা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছিল—আজ হয়তো আবার ভিজে ফিরতে হবে। তার ব্যাগে কোনো ছাতা ছিল না, আর বাসার পথটাও অনেকটা দীর্ঘ।

হঠাৎ করেই মেঘ ফেটে বৃষ্টি নামল। দমকা বাতাসে গাছের ডাল দুলছে, রাস্তায় পানির ধারা ছুটে যাচ্ছে। বন্ধুরা সবাই নিজেদের মতো ছাতা মেলে দৌড়ে বাড়ি চলে গেল। রুমানা দাঁড়িয়ে রইল কলেজের বারান্দায়। তার মনে এক ধরনের খচখচানি—কেন জানি আজ একা থেকে গেল সে।

ঠিক তখন পাশের ক্লাসের সাদিক বারান্দায় এসে দাঁড়াল। ছেলেটিকে রুমানা শুধু নামেই চিনত, কখনো কথা হয়নি। হাতে কালো রঙের একটি ছাতা নিয়ে সে হাসিমুখে বলল,
“আপনি কি বাসায় যাবেন না? অনেক বৃষ্টি হচ্ছে তো।”

রুমানা হেসে উত্তর দিল,
“যাব, কিন্তু ছাতা নেই। তাই ভাবছি বৃষ্টি কমলে যাব।”

সাদিক কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর ছাতাটি সামনে এগিয়ে দিল।
“আমি তো একই পথে যাই। চাইলে একসাথে যেতে পারেন।”

রুমানা একটু দ্বিধায় পড়ে গেল। আগে কখনো তো একসাথে হাঁটা হয়নি। কিন্তু চারপাশে ঝমঝম বৃষ্টি আর নিরুপায় অবস্থা দেখে সে রাজি হয়ে গেল।

দু’জন একসাথে ছাতার নিচে হাঁটা শুরু করল। রাস্তায় জল জমে ছোট ছোট ঢেউ খেলছে। বাতাসে ভিজে যাওয়া গাছের পাতা যেন সুর তুলেছে। রুমানার মনে হলো, এই বৃষ্টি ভেজা রাস্তা আসলে কোনো সিনেমার দৃশ্যের মতো।

পথে হাঁটতে হাঁটতে দু’জনের মধ্যে ছোট ছোট আলাপ শুরু হলো। পড়াশোনা, প্রিয় বই, ভবিষ্যতের স্বপ্ন—সবকিছু নিয়েই তারা কথা বলল। রুমানা অবাক হয়ে দেখল, সাদিক খুব সহজভাবে কথা বলে, তার হাসি একেবারেই আন্তরিক।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সাদিক বলল,
“আপনি জানেন, আমি বৃষ্টি খুব ভালোবাসি। মনে হয় প্রকৃতি তখন সবচেয়ে বেশি খুশি থাকে।”

রুমানা হেসে উত্তর দিল,
“আমিও বৃষ্টি ভালোবাসি, কিন্তু ভিজতে পারি না। ঠাণ্ডা লেগে যায়।”

এই সাধারণ কথাগুলোও তাদের কাছে এক বিশেষ অনুভূতি হয়ে উঠল। যেন প্রতিটি শব্দে এক অদ্ভুত বন্ধুত্বের সেতু গড়ে উঠছে।

অবশেষে রুমানার বাসার সামনে পৌঁছে গেল তারা। রুমানা ধন্যবাদ জানিয়ে বলল,
“আজ না থাকলে খুব কষ্ট হতো। ধন্যবাদ।”

সাদিক শুধু মৃদু হাসল, বলল,
“কষ্ট কিসের? আবার তো দেখা হবে।”

বৃষ্টি তখনও ঝরছিল, কিন্তু রুমানার মনে হচ্ছিল—আজকের দিনটা আলাদা। হয়তো এভাবেই মানুষের জীবনে নতুন সম্পর্ক শুরু হয়, অজান্তেই।